মাদকাসক্তি মানসিক স্বাস্থ্যে কীভাবে প্রভাব ফেলে? – এই প্রশ্নটি আজকের দিনে শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মাদকাসক্তি শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতি করে না, বরং এটি মানুষের মনের অবস্থা, মানসিক ভারসাম্য এবং দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
Rehabilitation BD এর এই ব্লগ পোষ্টে আমরা সহজ ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা করবো—কারণ আমরা চাই, আপনি সহজে পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন, এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে দ্বিধা না করেন।
মাদকাসক্তি ও মনঃসংযোগ
মাদক গ্রহণের পর মস্তিষ্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে দুইটি নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়:
ডোপামিনের ভারসাম্য হারানো
ডোপামিন হলো “reward chemical”—যা আনন্দ বা তৃপ্তির অনুভূতি তৈরি করে। মাদক গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এতে করে প্রাকৃতিক উপায়ে আনন্দ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে:
- সাধারন কাজ আর আগের মতো ভালো লাগে না
- মনোযোগ কমে যায়
- ছোটখাটো কাজেও উৎসাহ হারিয়ে যায়
সেরোটোনিনের ঘাটতি
সেরোটোনিন নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের মেজাজ, আবেগ ও একাগ্রতা। মাদক গ্রহণের ফলে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গিয়ে মন উদাস, অস্থির ও দিশেহারা হয়। এর প্রভাবে:
- দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না
- হতাশা ও চঞ্চলতা দেখা দেয়
- সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দুর্বল হয়
রিহ্যাব সেবার জন্য ফ্রি কনসালটেশন নিতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: কল করুন: +88 01716623665
শিক্ষা ও কাজের ক্ষেত্রে উদ্বেগ ও ব্যাঘাত
মাদকাসক্তি ব্যক্তি শিক্ষাজীবন কিংবা পেশাগত জীবনে স্থায়ী ও ভয়ংকর ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। নিচে বিষয়টি কয়েকটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করা হলো:
পড়াশোনায় প্রভাব
- পাঠ্যবস্তুর প্রতি আগ্রহ কমে যায়: মাদকের কারণে মস্তিষ্কে নতুন তথ্য গ্রহণ ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পড়া মুখস্থ রাখা, বোঝা এবং পরীক্ষায় উপস্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে: একটি বিষয়ের পড়া কয়েকবার পড়লেও তা মনে থাকে না। বারবার ভুলে যাওয়া বা অনিচ্ছা তৈরি হয়।
- পরীক্ষাভীতি ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে যায়, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।
কাজের জায়গায় প্রভাব
- প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়: মাদকাসক্ত ব্যক্তি কাজের সময় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। দায়িত্বপূর্ণ কাজে ভুল হয় বা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।
- সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব: একঘরে ভাব, সন্দেহ, রাগ বা আতঙ্কজনিত আচরণের কারণে কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়।
- বস বা ম্যানেজমেন্টের নজরে আসে: মাদকাসক্ত কর্মী বারবার অনুপস্থিত থাকেন, নিয়ম ভঙ্গ করেন, এবং অনেক সময় চাকরি হারাতে হয়।
মেজাজের পরিবর্তন ও আবেগজনিত প্রভাব
ডিপ্রেশন ও হতাশা
মাদকাসক্তির ফলে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা কমে যায়। ফলশ্রুতিতে একজন ব্যক্তি হতাশ অনুভব করে, কখনো কখনো অবসাদে পড়ে যায়।
চিড়চিড়, রাগপ্রবণতা
রোগীর মানসিক ভারসাম্য ভেঙে যায়। অনেক সময় ক্ষুদ্রেকথায় বা ঘটনা নিয়েও রাগ, অবসাদ, আক্রোশ প্রকাশ পায়।
আত্ম-হত্যার প্রবণতা
যারা মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্তির সাথেই প্রতিযোগিতা করছেন, তাদের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধির ফলে আত্ম-হত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।
সামাজিক ও পারিবারিক প্রভাব
একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
কী ঘটে?
মাদকাসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার জীবনে পরিবারের গুরুত্ব কমে যায়, বন্ধুবান্ধবের সান্নিধ্য উপেক্ষিত হয় এবং সে নিজের মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকে।
এর পেছনের কারণ:
- অপরাধবোধ, আত্মসমালোচনা বা ভয় থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।
- সমাজের নেতিবাচক মন্তব্য বা অবজ্ঞার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ।
- সাধারণ কাজকর্ম, অনুষ্ঠান বা সম্পর্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
এর পরিণতি:
- ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়।
- একাকিত্ব থেকে হতাশা, বিষণ্ণতা বাড়ে।
- মানসিক অসুস্থতা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি
কীভাবে আর্থিক সমস্যা হয়?
মাদক কেনার জন্য বারবার অর্থের প্রয়োজন হয়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার সঞ্চয়, পরিবারের অর্থ এবং কখনো কখনো চুরির মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:
- পারিবারিক আয় ধ্বংস: সংসারের খরচের পরিবর্তে অর্থ ব্যয় হয় মাদকে।
- চাকরি হারানো: দায়িত্বহীনতা ও অপ্রত্যাশিত আচরণের কারণে চাকরি থাকে না।
- ঋণগ্রস্ততা: মাদকের খরচ মেটাতে ঋণ নিয়ে পরিবারকে আর্থিক চাপের মুখে ফেলে।
এর পরিণতি:
- পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়।
- শিশুর শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো ব্যাহত হয়।
- দাম্পত্য কলহ, ঝগড়া বা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
পারিবারিক সংঘাত ও সম্পর্কহীনতা
মাদকাসক্তির প্রভাব পরিবারে কেন এত ভয়াবহ?
যখন একজন ব্যক্তি মাদকে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার আচরণে হয় পরিবর্তন। সে পরিবারে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, সহানুভূতি বা দায়িত্ববোধ থাকে না, যা পরিবারে অসহ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
ঘটে যাওয়া কিছু বাস্তব রূপ:
- বাক্যশূন্যতা: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। মনোযোগ বা ভালোবাসার জায়গায় আসে অবিশ্বাস ও বিরক্তি।
- মারামারি ও নির্যাতন: মাদকাসক্ত ব্যক্তি রাগপ্রবণ হয়ে যায়, এবং অনেক সময় শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের আশ্রয় নেয়।
- সম্পর্কহীনতা: বাবা-মা, জীবনসঙ্গী বা সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে।
শিশুদের উপর প্রভাব:
- বাড়ির অশান্ত পরিবেশে তারা মানসিকভাবে ভীত ও দুর্বল হয়।
- স্কুলে মনোযোগ কমে যায়, আত্মবিশ্বাস কমে এবং তারা নিজেরাও বিপথে যেতে পারে।

শারীরিক উপসর্গ ও মানসিক স্বাস্থ্য
ঘুমের ব্যাঘাত
অনিদ্রা (ইনসমনিয়া)
মাদক গ্রহণের কারণে অনেক সময় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ঘুমের হরমোন (যেমন মেলাটোনিন) নিঃসরণ ব্যাহত হয়। এর ফলে ঘুম আসতে চায় না, দীর্ঘ সময় জেগে থাকতে হয়। এতে মানসিক অবসাদ, বিরক্তি ও একঘেয়েমি তৈরি হয়।
অতিরিক্ত ঘুম (হাইপারসমনিয়া)
কিছু মাদক যেমন হেরোইন বা ঘুমের বড়ি জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে রোগী অতিরিক্ত ঘুমায়, সচেতনতা কমে যায় এবং কাজকর্মে উদাসীনতা আসে। এটি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
অস্বাভাবিক ঘুমের রুটিন
রাতে জাগা, দিনে ঘুমানো কিংবা হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়া—এভাবে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে যায়। এতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে।
উদ্বেগ ও প্যানিক অ্যাটাক
অতিরিক্ত উদ্বেগ (Anxiety)
মাদক গ্রহণকারীরা প্রায়ই অকারণে ভয় পায়, দুশ্চিন্তা করে, এমনকি সাধারণ পরিস্থিতিতে মানসিক চাপে পড়ে যায়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে generalized anxiety disorder (GAD) হয়ে দাঁড়ায়।
প্যানিক অ্যাটাক (Panic Attack)
হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় এই ধরণের আচমকা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন।
মানসিক অস্থিরতা
মনের মধ্যে সবসময় অস্বস্তি, ভয়, বিষণ্ণতা, অজানা অশান্তি বিরাজ করে। এটি সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক অবচেতনতা
মস্তিষ্কে প্রভাব
নিয়মিত মাদক সেবনে নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে চিন্তা-ভাবনায় গরমিল, স্মৃতিভ্রষ্টতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং কখনও কখনও হ্যালুসিনেশনও দেখা দেয়।
হার্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি
কিছু মাদক যেমন কোকেইন, নিকোটিন ও হেরোইন—হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, যা মানসিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে মানুষ বারবার অসুস্থ হয়। এটি মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং উদ্বেগ তৈরি করে।
মানসিক অচেতনতা ও ‘ব্ল্যাকআউট’
কিছু মাদক গ্রহণের পর ব্যক্তি চেতনা হারাতে পারেন বা ‘ব্ল্যাকআউট’ অবস্থায় চলে যেতে পারেন। এমন সময় তিনি কী করছেন বা বলেছেন, পরে তা মনে রাখতে পারেন না—এটি মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মাদকাসক্তি থেকে মানসিক সুস্থতার পথে পদক্ষেপ
প্রথম পদক্ষেপ: স্বীকারোক্তি — নিজেকে মেনে নেওয়া
মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু হয় নিজেকে মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।
অনেক মানুষ ভয়, লজ্জা কিংবা অস্বীকারের বেষ্টনীতে থেকে যায় — “আমি আসক্ত নই”, “আমি যে কোনো সময় ছেড়ে দিতে পারি” — এমন আত্মপ্রতারণা সমস্যা আরও গভীর করে তোলে।
যখন আপনি বলেন, “আমি মাদকাসক্ত”, তখনই আপনি সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার দরজাটা খুলে ফেলেন। এই স্বীকারোক্তি আপনার মনের শক্তিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে, যা রিকভারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: পেশাদার সহযোগিতা নেওয়া
নিজেকে মেনে নেওয়ার পরে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সঠিক পেশাদার সহায়তা গ্রহণ করা।
মাদকাসক্তি কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে নিরাময় হয় না—এটা একটি জটিল মানসিক ও শারীরিক রোগ, যার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা প্রয়োজন।
Rehabilitation BD-এর মতো প্রতিষ্ঠান আপনাকে সরবরাহ করে:
- বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের সহায়তা
- কাউন্সেলিং ও থেরাপি সেশন
- চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে মাদকের প্রভাব দূর করার “ডিটক্স” প্রক্রিয়া
- ব্যক্তিগতভাবে কাস্টোমাইজ করা রিকভারি পরিকল্পনা
এই ধাপে আপনি নিজের ওপর ভরসা রাখতে শিখবেন, নির্ভরযোগ্য হাতে নিজেকে তুলে দেবেন।
তৃতীয় পদক্ষেপ: পরিবারের অংশগ্রহণ
পরিবারই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির সবচেয়ে বড় শক্তি।
তবে শর্ত হলো—পরিবারের সদস্যদের সচেতন ও সহানুভূতিশীল হতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, পরিবার মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা রোগীকে আরও একাকী করে তোলে।
Rehabilitation BD পরিবারকে যুক্ত করে বিভিন্ন ধাপে:
- পারিবারিক কাউন্সেলিং সেশন
- রোগীর উন্নয়নের রিপোর্ট শেয়ার
- কিভাবে রোগীকে মানসিকভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেই প্রশিক্ষণ
পরিবারের ভালবাসা, সমর্থন এবং বোঝাপড়া রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত করে তোলে এবং আত্মবিশ্বাস ফেরায়।
চতুর্থ পদক্ষেপ: জীবনযাপন ও দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন
মাদক ছেড়ে দিলেই রিকভারি শেষ হয় না—নতুন অভ্যাস, নতুন রুটিন তৈরি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Rehabilitation BD রোগীদের উৎসাহ দেয়:
- নতুন শখে নিজেকে ব্যস্ত রাখা — যেমন ছবি আঁকা, গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা
- যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন — মানসিক প্রশান্তি ও মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- সামাজিক কাজকর্ম — অন্যদের সাহায্য করলে নিজের আত্ম-মূল্যবোধও বাড়ে
এই অভ্যাসগুলো আপনাকে পুরোনো নেতিবাচক চিন্তা ও পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে এবং সুস্থ জীবনের দিকে পরিচালিত করে।
পঞ্চম পদক্ষেপ: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিত করা
মাদকাসক্তির কারণে অনেক সময় ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ভেঙে যায়।
ঘুমের ঘাটতির কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়, উদ্বেগ বাড়ে এবং মানসিক চাপ তৈরি হয়।
এই ধাপে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ঘুমের রুটিন তৈরি করা এবং মানসিক বিশ্রাম নিশ্চিত করা।
Rehabilitation BD এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে কাজ করে:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা
- সন্ধ্যায় মোবাইল-টিভি কম ব্যবহার করা
- ধ্যান বা মেডিটেশন করে ঘুমের আগে নিজেকে শান্ত রাখা
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘুমের জন্য নিরাপদ ও প্রাকৃতিক মেডিকেশন
ঘুম যদি সঠিক হয়, তাহলে মন ও শরীর দুটোই সুস্থ থাকবে এবং রিকভারি আরও কার্যকর হবে।
ধাপে ধাপে রিকভারি প্ল্যান
ধাপ ১: বিশ্লেষণ ও ডায়াগনোসিস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গোছানো তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক নির্ধারণ।
ধাপ ২: ডিসিনটক্স
মেডিকেল মনিটরিং ও থেরাপিউটিক কাউন্সেলিং—চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে দ্রুত নিরাময় শুরু।
ধাপ ৩: থেরাপি সেশন
ইন্ডিভিজুয়াল থেরাপি, গ্রুপ সাপোর্ট, পরিবার সহায়তা সেশন।
ধাপ ৪: রিল্যাপস প্রিভেনশন
স্বাস্থ্যকর রুটিন গঠন, ট্রিগার কমানোর কৌশল।
ধাপ ৫: ফলো-আপ
নিয়মিত দেখা, সেশন, গ্রুপ মিটিং, ওয়েল-বিয়িং চেক।
কেন Rehabilitation BD সবচেয়ে উপযোগী
Rehabilitation BD: স্থানীয়, বিশ্বস্ত ও মানবিক
- স্থানীয় বাংলাদেশী-পরিপ্রেক্ষিত: আমাদের দল চট্টগ্রাম, ঢাকা — এমনকি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করছে।
- ভাষাগত সুবিধা: আমরা সহজ বাংলায় কথা বলি, পড়ি, বুঝি। জটিল হেলথ টার্মিনোলজি থেকে দূরে থাকি, তাই আপনার মন ভাল থাকবে।
- সম্পূর্ণ থিক-আপ সেবা: আমরা দেওয়া অফলাইন কাউন্সেলিং, গ্রুপ সাপোর্ট, পারিবারিক ঋতিমূলক প্রোগ্রাম – এইগুলো আপনাকে পুরোপুরি সামলবে।
- রিকভারি পরিকল্পনা: প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা—detox, থেরাপি, মেডিকেল মনিটরিং এবং follow-up সহায়তা – একসাথে।
কেন আমাদের পরিকল্পনা ভালো
- একরকম সাপোর্ট, একরকম মনোযোগ—শুধু আপনি
- বোঝার সঙ্গে বোঝানো—ভাষায় সাদৃশ্য
- আপনার সঙ্গে যাচাই—প্রগতি নিরীক্ষণ
- নিয়মিত টাচ-ইন, পুনরায় শুরু না—“relapse prevention”
- সম্পূর্ণ নিরাপদ ও গোপনীয়তা নিশ্চিন্ত
রিহ্যাব সেবার জন্য ফ্রি কনসালটেশন নিতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: কল করুন: +88 01716623665
উপসংহার
“মাদকাসক্তি মানসিক স্বাস্থ্যে কীভাবে প্রভাব ফেলে?” — উত্তরটি স্পষ্ট: একদিকে এটি মনের ভারসাম্য থইথই করে দেয়, অন্যদিকে শারীরিক-সামাজিক-আর্থিক রুপে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই লড়াইতে আপনি একা নন। Rehabilitation BD আপনার পাশে আছে—সহজ ভাষা, ব্যক্তিগত প্ল্যান, ও প্রফেশনাল সাপোর্ট দিয়ে।
আজই যোগাযোগ করুন। আপনার জীবন আবার আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
FAQ: সাধারণত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
মাদক গ্রহণ করলে কি মানুষ মানসিক রোগী হয়ে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক সময় নিয়মিত মাদক গ্রহণের ফলে স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, প্যারানোইয়া বা ডিপ্রেশনের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।
কিশোর বয়সে মাদক শুরু করলে মানসিক ক্ষতি বেশি হয় কেন?
উত্তর: কিশোর বয়সে মস্তিষ্কের বিকাশ চলতে থাকে। মাদক গ্রহণ করলে সেই বিকাশ ব্যাহত হয় এবং ভবিষ্যতে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মাদকাসক্তির কারণে কী পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, বারবার মিথ্যা বলা, চুরি, আগ্রাসী আচরণ ও একাকীত্বের কারণে পরিবার ভেঙে পড়তে পারে এবং বিশ্বাস নষ্ট হয়।
মানসিক রোগ ও মাদকাসক্তি একসাথে থাকলে কি চিকিৎসা জটিল হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, একে বলা হয় Co-occurring Disorder বা Dual Diagnosis। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের সঠিক গাইডলাইনে চিকিৎসা জরুরি।
মাদক ছাড়ার পরেও কি মানসিক সমস্যা থাকতে পারে?
অনেক সময় মানসিক সমস্যাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, বিশেষ করে যদি আগে থেকেই মানসিক দুর্বলতা থাকে। নিয়মিত কাউন্সেলিং ও থেরাপি খুব দরকার।
আত্মবিশ্বাস ফেরাতে মাদকাসক্ত রোগীদের জন্য কী করা যেতে পারে?
উত্তর: সঠিক কাউন্সেলিং, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক সহযোগিতা এবং ধাপে ধাপে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে অর্জন করা আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
মাদকাসক্তদের জন্য সমাজের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
উত্তর: সমাজকে উচিত সহানুভূতির সাথে ব্যবহার করা, অপরাধী নয় বরং রোগী হিসেবে দেখা এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য সহায়তা করা।